আনন্দ আশ্রম
– অঞ্জনা গোড়িয়া
ফাঁকা বারান্দাটা খাঁ খাঁ করছে। শূন্য চেয়ার তিনটি এখনো রাখা আছে বারান্দায়। যদি আবার কোনোদিন সে ফিরে আসে। বাড়িটা সাজানো আছে এখনো। সব ঠিক আগের মতো।
এখানে বসেই চলতো হাসি মস্করা ঠাট্টা তামাশা।
আজ একা শুধু জ্যোতির্ময়।
একা রান্না করা, খাওয়া। গান শোনা। গান গাওয়া। সব একাই করছে।
নিস্প্রাণ একটা বারান্দায় দাঁড়িয়ে জ্যোতির্ময় একা।
অফিস থেকে বাড়ি ফিরলে কেউ বলে না আর, “কি গো আজ এত ক্লান্ত লাগছে কেন? কাজের চাপটা খুব বেশী ছিল বুঝি?”
শরবতটা এগিয়ে দিয়ে বলে না, “হাত মুখ ধুয়ে একটু রেস্ট নাও। আমি টিফিনটা নিয়ে আসছি।”
নিজের খেয়ালে গান গেয়ে উঠলে, কেউ বলে না, “শুভ্র দেখ তো বাবা, ওপাড়ায় নতুন এক বাসিন্দা এসেছে। জানালাটা বন্ধ করে দে। গান শুনে এখুনি তেড়ে আসবে।”
শুভ্র এ বাড়ির একমাত্র ছেলে। হো হো করে হেসে উঠতো।
সঙ্গে সঙ্গে শুভ্রের বাবা জ্যোতির্ময় এক মুখ অভিমানের সুরে থামিয়ে দিত গানটা।
আবার যখন মা-ছেলেতে জোরে জোরে কবিতা পাঠ করতো। জ্যোতির্ময় তখন তবলায় তাল দিত। গামলা বাজাতো বে-তালে। শুনিয়ে দিত জোরে জোরে, আমিও কিছু কম নয়।
সবটাই ছিল ভালোবাসার অভিমান। অনুরাগ আর মজার খোরাক ।
আজ বাড়িতে জ্যোতির্ময় একা। মাস তিনেক হলো আলাদা থাকে।
ছেলে শুভ্র থাকে বোর্ডিং-এ। বউ থাকে একটা মহিলা হোস্টেলে। শুনেছে বাপের বাড়িতে নিজে ইচ্ছে করেই থাকে না। পাড়া প্রতিবেশির ঠাট্টা তামাশার হাত থেকে বাবা মাকে রেহাই দিতে।জ্যোতির্ময়ের বিধবা মা-কে আগেই রেখে এসেছিল বৃদ্ধাশ্রমে। এসব ঝুট ঝামেলা বুড়ো মা সইতে পারবে না ভেবে।
দো-তালা বাড়িতে জ্যোতির্ময় একা। যে সময় অফিসে থাকে। কেটে যায় ব্যস্ততায়। রোজ ছুটির পর বন্ধু -বান্ধব এসে আড্ডা দিত এ বাড়িতে। একটা আস্ত ক্লাব বানিয়ে ফেলেছে জ্যোতির্ময়।
হইচই মদ সিগারেট গান দিব্যি চলে আড্ডাখানার আড্ডা আর গল্পের আসর।
আসলে সবটাই ভুলে থাকার প্রচেষ্টা মাত্র। শুরু হলো লকডাউন। অফিসটাও বন্ধ। বন্ধুবান্ধবও আসে না আর। যে যার সংসারে বউ -ছেলে-মেয়ের সঙ্গে থাকে বন্দী। কাজের বউটাও অনেক দিন আগেই ছেড়ে দিয়েছে কাজ। মুখের ওপর একদিন বলে দিল, “একাকী পুরুষ মানুষের বাড়িতে কাজ করতে পারবো না” অন্য লোক দেখে নাও। আসলে মনোরমাকে খুব ভালোবাসতো। বউমনি চলে যাবার পর থেকে কাজের বউটাও আর ভালো লাগে না এ বাড়িতে আসতে।
এখন সঙ্গী বলতে অগোছালো একটা খাট। যেখানে একাই থাকে সারারাত। দু’টো বাথরুম। কিন্তু একটাই ব্যবহার করে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নাটা নীরবে দাঁড়িয়ে আছে।
কেউ তাকিয়ে থাকে না তার দিকে। সামনে রাখা টুলটায় কেউ বসে না সাজ বাক্স খুলে সাজতে। নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে গোটা ঘরটা। একাই মালিক একাই রাঁধুনি একাই পরিবার।
চুল দাঁড়ি গজিয়ে উঠেছে। আয়নায় মুখ দেখতেও ইচ্ছে করে না।
না না,জ্যোতির্ময় এখনো পাগল হয় নি। শুধু কথা বলার আর কথা শোনার জন্য নিজের ছায়ামূর্তিকেই সঙ্গী করেছে।
এমনটা তো হবার কথা ছিল না। জ্যোতির্ময় মনোরমা আর শুভ্রের খুশির পরিবার। হাসি খুশি একটা সংসার। কেমন যেন ছন্নছাড়া হয়ে গেল।
যেদিন জ্যোতির্মের স্ত্রী মনোরমা প্রথম কবিতা লিখে একটা পত্রিকায় সেরা কবির সম্মান পেল। কি আনন্দ বাড়িতে সেদিন।
মনোরমা প্রথম থেকেই একটু আধটু কবিতা লিখতো জানতো। বিয়ের প্রথম প্রথম জ্যোতির্ময়ের জন্য কবিতা লিখে রেখে দিত বালিশের তলায়। কখনো সময় হলে একটু পড়তো কখনো বা চোখ বুলিয়েই রেখে দিত। মুখে বানিয়ে বানিয়ে শুনিয়ে দিত, “বাহ্, দারুন দারুন লিখেছ। বাংলার মানুষ ভালো এক মহিলা কবিকে দেখতে পাবে এবার।”
বাংলা ধন্য হবে। কি বলো? যদিও সবটাই ঠাট্টা করে। মনোরমা অবশ্য সব বুঝেও কিছু মনে করতো না। তারপর থেকে আর দেখাতো না কিছু লেখা। লিখে যেত গোপনে। সবার চোখের অন্তরালে। গুনগুন করে গেয়ে উঠতো নিজের কবিতা।
জ্যোতির্ময়ের ওপর কোনো অভিমান ছিল না। নিঃশব্দে সংসার করে যাচ্ছিল। সব অভিমান চেপে রেখে দিব্যি চলছিল মিষ্টি মধুর সংসার।
মনোরমা ভালো আবৃত্তিও করতে পারতো। পাড়ার ক্লাবে প্রথম যেবার স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করল, ভয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে। সেদিন জ্যোতির্ময়ই সাহস দিয়েছিল। বলে ছিল, “বাড়িতে এত সুন্দর আবৃত্তি করো। আর স্টেজে পারবে না? আমি না হয় তবলা বাজাবো কি বলো?”এটা অবশ্য মজা করে।
পাড়া সুদ্ধ লোক ওর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বিপদ হলো সেদিন। যেদিন রাত এগারোটা বেজে গেল। বাড়িতে ছেলে একা। অথচ মনোরমার দেখা নেই।
অবশ্য বলে গিয়েছিল মনোরমা একটু দেরি হবে। একটা প্রাচীন দেবীমূর্তির আবির্ভাব হয়েছে পুরানো রাজবাড়ীতে। কিছু সাহিত্যিক কবি বন্ধু মিলে সেখানেই যাবে। সাহিত্যিক অনুসন্ধান হবে। নতুন কিছু ভাবনা নিয়ে। নতুন কিছু লেখা সৃষ্টির আশায়।
বুঝতে পারে নি এত দেরি হবে। জ্যোতির্ময় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে দেখে ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে কিছু না খেয়ে। ফোনেও পাচ্ছে না স্ত্রীকে।
মাথাটা গরম হয়ে যায়। শুরু হলো রাগ সন্দেহ আর অবিশ্বাস।
মনোরমা ফিরে এসে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল। কান ধরে স্বামীর সামনে উঠবসও করেছিল। কারণ ফোনে চার্চ ছিল না। কিছু জানাতে পারে নি তাই। ভেবেছিল, বাড়ি ফিরে সবটা গুছিয়ে বলবে। এতটা রাগ করবে, ভাবতেই পারে নি মনোরমা।
দিন দিন মনোরমা কবিতা লেখার নেশায় মত্ত হয়ে ওঠে। ভুলে যায় খাওয়া দাওয়া, সাজ, রাতের ঘুম।
দিনের পর দিন একলা বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছে জ্যোতির্ময়কে। ডাকলেই উত্তর “আর একটু প্লিজ। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। আমি এখুনি যাচ্ছি প্লিজ।”
কখন যে ঘুমিয়ে পড়তো জ্যোতির্ময় বুঝতেই পারতো না। ঘুম ভেঙে পাশে দেখে সেই একা। টেবিলে বসেই ঘুমিয়ে আছে মনোরমা।
মনের অসন্তোষ চেপে রেখে যে যার নিজের মতো ছিল। পাছে ছেলের কোনো ক্ষতি হয়। দুজনের সিদ্ধান্তে ছেলেকে মিশনে পড়ানোর ব্যবস্থা করলো।
মিশনের পরিবেশে ডিসিপ্লিনের মধ্যে বড় হলে, ছেলে মানুষ হবে। দুজনেরই খুব কষ্ট হয়েছিল। তবু ছেলের ভালোর জন্য রেখে এল বোর্ডিং-এ। শুভ্র কিছুতেই রাজি ছিল না মাকে বাবাকে ছেড়ে যেতে। তবু মায়ের কথায় চলে গেল মিশনে।
তারপর থেকে প্রায় দিন রাগ অভিমান।
সেদিন বেশ আকাশে মেঘ উঠেছে। ঝড় বৃষ্টি ঝেঁপে আসছে। অথচ মনোরমার দেখা নেই। এক কবি বন্ধুর সাথে সাহিত্য-সম্মেলন থেকে বাড়ি ফিরলো মনোরমা।
বাড়িতে একা অসহ্য মাথার যন্ত্রনায় ছটপট করছে।
মনোরমা বাড়ি ফিরতেই জানিয়ে দিল, “এত দেরি? কোথায় ছিলে? আর এ সব লিখতে হবে না। হয় এখানে থাকো নইতো বাপের বাড়ি চলে যাও। রোজ রোজ বাইরে যাওয়া চলবে না।
আমি এসব আর সহ্য করবো না। আমার মাথাটা যন্ত্রণায় ছিঁড়ে যাচ্ছে। অথচ বাড়িতে তুমি নেই। কি হবে এসব লিখে?”
মনোরমার বুকটা ঝনঝন করে উঠল। যাকে নিয়ে এতদিন এতগুলো বছর এক সাথে কাটিয়ে দিল। সেই মানুষটাই মনোরমার ভালোলাগা স্বপ্নগুলো পূরণ হোক, চায় না।
একদিন স্নান সেরে ঘরে এসে দেখে ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলো ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করা।
কবিতার টুকরো কাগজ মাটিতে পড়ে ছটপট করছে। সারারাত ধরে যেটা লিখেছিল যত্ন করে। নিজের সৃষ্টিকে এভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে দু’চোখ জলে ভরে গেল।
তবু মনোরমা মুখে কিছু বললো না।
মনকে শক্ত করলো। আর থাকা যায় না এবাড়িতে। বাবা মা আত্মীয় পরিজন কেউই সঙ্গ দেবে না জানতো। লেখার জন্য স্বামী সংসার ছেড়ে আলাদা, এখনো এত উন্নত সমাজ গড়ে নি।
তাই নিজের গয়না বন্ধক দিয়ে আলাদা একটা ঘর ভাড়া নিল। বেরিয়ে এল সাজানো বাড়ি থেকে। সে আলাদা থাকবে। জ্যোতির্ময় অবশ্য প্রথমে বাধা দিয়েছিল। সামান্য লেখার জন্য ঘর ছাড়বে মনোরমা। ভাবতেই পারে নি।
অনেক বার ভেবেছে মনোরমা, এই বুঝি জ্যোতির ফোন আসে। ফিরে যেতে অনুরোধ করবে। দুজনেই দুজনার অপেক্ষায়। জ্যোতির্ময়ও ধরে নিয়েছিল, একদিন নিশ্চয় ফিরে আসবে। মনোরমার জেদের কাছে হেরে গেল জ্যোতির্ময়। আর আসে নি ফিরে।
দেখতে দেখতে তিন মাস হয়ে গেল। জ্যোতির্ময় একা বড়ো। ওই ফাঁকা বারান্দায়।
মনোরমা লেখার ফাঁকে ফাঁকে মন ছুটে যায় সেই বারান্দায়। এক সাথে গল্প করা আড্ডা দেওয়া। মনকে পাথর করে লেখায় মন দিল।
অবশ্য নিয়মিত ছেলের খোঁজ নেওয়া, তাকে ফোনে ভালো থাকার কথা বলতে ভুলতো না।
নিজে কিছু টিউশন শুরু করলো। নিজের সামান্য খাওয়া খরচ তাতেই চলে যেত। জ্যোতির্ময় দিতে চেয়েছিল, মনোরমা ফিরিয়ে দেয়। তবে ছেলের পড়াশোনার খরচ জ্যোতির্ময়ই দিত।
মনোরমা আরও নিষ্ঠার সঙ্গে লেখার সাধনায় মন দিল। মন প্রাণ দিয়ে সাহিত্যের সাধনায় ব্রতী হলো। সব কিছু ভুলে থাকার এটাই সাধনা। অনেক বড়ো হতে হবে। মহিলা কবি হয়ে দেখিয়ে দেবে, সে কোনো কিছুতেই কম নয়।
(৩)
দুজনের মাঝে সম্পর্কের বন্ধন ছেলে শুভ্র। শুভ্র এখন মিশন বোর্ডিংএ।
নিয়ম করে দুজনে আলাদাভাবে দেখা করতে যেত ছেলে শুভ্রকে।
শুভ্রের মনে একটা প্রশ্ন দানা বাঁধতে থাকে। একদিন বাবাকে প্রশ্ন করে — মা আসে নি কেন সঙ্গে? দুজনে একসাথে আসো না কেন? কি উত্তর দেবে জ্যোতির্ময়? নানান অজুহাতে কথা ঘুরিয়ে দিত।
আবার মায়ের কাছে প্রশ্ন, বাবা কোথায় মা? বলতো খুব কাজের চাপ সোনা। তাই একাই এসেছি শুভ্র। এই ভাবেই চলছিল বেশ।
তারপরই শুরু হলো লক ডাউন। সমস্ত মিশন হোস্টেল ছুটি দিল। ফিরিয়ে আনতে হবে ছেলেকে। দুজনেই চায় নিজেদের কাছে রাখতে। এবার জানতেই পারবে। কি হবে ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে।
ছোট্ট শুভ্র এই কদিনেই বেশ বড়ো হয়েছে। বুঝতে শিখেছে বাবা মায়ের সম্পর্কটা কেমন যেন খাপ ছাড়া।
গাড়িতে যেতে যেতে ভাবতে লাগলো, নিশ্চয় মনোরমা আসবে। আজ নিশ্চয় বাড়ি ফিরতে চাইবে ছেলের জন্য।
কত দিন পর দেখব ওকে। গাড়িটা থেমে গেল গেটের সামনে।
ধীর পায়ে এগিয় গেল শুভ্রের ঘরের দিকে।
মনোরমা বসে আছে শুভ্রের পাশে।
বাবার আসার অপেক্ষায় ছিল শুভ্র।
বাবাকে দেখেই স্পষ্ট জানিয়ে দিল, বাড়ি যদি ফিরতে হয় তো এক সাথে ফিরবো। নইলে আর ফিরবে না।
কতদিন পর একসাথে হয়েছে তিনজনে।
মনোরমার মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মনোরমার মুখের সেই লাবণ্য আর নেই। বড্ড রোগা লাগছে।
নিশ্চয় ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে নি। লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়ে হয়তো। কে আর ডেকে খেতে বলবে? যা মেয়ে না খেয়েই লিখে চলেছে।
মনোরমা অবশ্য আড় চোখে তাকিয়ে না দেখার ভান করে থাকে।
শুভ্রকে আদর করে গলা জড়িয়ে ধরে আছে মনোরমা।
চল সোনা, আমার কাছে গিয়ে থাকবি।
আমার হাতের রান্না কত দিন খাস নি বল তো?
জ্যোতির্ময়ের খুব রাগ হলো। শুধু ছেলেকে আদর। আমার বুঝি খেতে ইচ্ছে করে না? কত দিন খাই নি আদর? এক বার ফিরেও তাকালো না। ওর হাতের বিরিয়ানির স্বাদ কি ভোলা যায়?
উফফ জিভে জল আসছে। কিন্তু শুভ্রের কি হবে? এক জেদ, তোমরা যদি একবাড়িতে থাকো তবেই ফিরবো। নইলে আর ফিরব না।
কিছুতেই রাজি হলো না শুভ্র। বাবার বাড়িতে ফিরতে। দুজনেই মনের ইচ্ছেটা মনেই থেকে গেল। মুখে কেউ কিছু বললো না। চোখ দু’টো আবছা হয়ে আসে। চোখটা ভিজে যাওয়ার আগেই বেরিয়ে আসে ঘর থেকে। শূন্য মনে ফিরে এল জ্যোতির্ময়। আবার সেই ফাঁকা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের আলো দেখে।
হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ। কেউ তো আসে না আজকাল এবাড়িতে। ভুল শুনছে না তো? আবার একবার বেজে উঠলো বেলটা। নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না। ভালো করে শোনার চেষ্টা করলো। কেউ একজন ডাকছে। চেনা সেই গলা সেই কন্ঠস্বর। ছুটে গেল দরজার সামনে। গেটটা খুলে দিল। চমকে উঠলো। ভুল দেখছি না তো? দাঁড়িয়ে আছে শুভ্র আর মনোরমা। কি অপার শান্তি! এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুজনার দিকে।
কথা বলার মতো ভাষা খুঁজে পেল না। ঠোঁটটা কেঁপে উঠল। শুভ্রের “বাবা” ডাকে ফিরে এল নিজের জগতে। কি অপার শান্তি।
মনোরমা ছেলের আবদারের কাছে হার মেনেছে।
ফিরে এল বাড়ি। তবে দেবী সরস্বতীর সামনে নিজেকে লেখার সাধনায় উৎসর্গ করে তবেই ফিরেছে মনোরমা।
জ্যোতির্ময়ও এতদিনে বুঝেছে, মনোরমার সাধনার কাছে সে পরাজিত। মনোরমার লেখা কবিতায় গান হয়ে ভেসে আসে জ্যোতির্ময়ের কন্ঠে। বুঝেছে নিজের ভুল।
এ গান আনন্দের। মহা মিলনের। এটাই তাদের আনন্দ আশ্রম। ফাঁকা বারান্দা থেকে ভেসে আসে সেই সুর — তিনটি মন্ত্র নিয়ে যাদের জীবন। —- এক আনন্দ আশ্রম।
খুব ভালো লাগলো।